ত্বীন ফল (Fig)
ত্বীন ফল-( Dried Fig), সুমিষ্ট স্বাদের রসালো একটি ফল,যার উল্লেখ রয়েছে পবিত্র কুরআনে। সূরা ত্বীন-এ মহান আল্লাহ এই ফলের নামে শপথ করেছেন। এই বরকতময় ফলের চাহিদা সম্প্রতি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পবিত্র কোরআন শরীফের ৯৫ নম্বর সূরার নাম “আত্ তীন”। তীন আরবি শব্দ, যার অর্থ আঞ্জির বা ডুমুর। এ সূরায় মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন “ওয়াততীন ওয়াঝঝাইতূন। ওয়া তূরি ছীনীন। ওয়া হা-যাল বালাদিল আমীন। ” অর্থ : শপথ তীন ও যাইতূন এর। শপথ সীনাই পর্বতের এবং শপথ এই নিরাপদ ও শান্তিময় নগরীর। (আয়াত :১-৩)। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআনে ‘ত্বীন’ বা আঞ্জির ফলকে আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত বা অনুগ্রহরূপে ব্যক্ত করা হয়েছে।
উপকারিতা
কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে
রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান বেশি মানে হৃদপিণ্ডের ঝুঁকি। তাই রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
ত্বীন ফলের ফাইবার শরীরে দ্রুত শোষিত হয়। এর ফাইবার দ্রুত দ্রবীভূত হয়ে করতে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়াও ত্বীন ফলে বিদ্যমান পেকটিন কোলেস্টেরল কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
আপনি যদি উচ্চরক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে নিয়মিত ত্বীন ফল গ্রহন আপনার রক্তচাপ আশানুরূপভাবে কমতে শুরু করবে।
ত্বীন ফলে প্রচুর পরিমাণ পটাসিয়াম বিদ্যমান। এটি উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
ক্যালসিয়াম,পটাসিয়াম,আয়রন ও জিংক সমৃদ্ধ ত্বীন-কে যৌন পরিপূরক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম,যা সেক্স হরমোন ও এস্ট্রোজেন ও এন্ড্রোজেন উৎপাদনে সাহায্য করে।
এই ফল নারী ও পুরুষের বিভিন্ন ধরনের যৌন সমস্যা সমাধান করে এবং যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে।
এর সুফল পেতে সারারাত দুধের মধ্যে ত্বীন ফল ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করুন।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখে
মারণব্যাধি ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখে। ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীল ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ত্বীন ফল খুবই উপকারী।
কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস প্রতিরোধে
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় ডুমুর কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
দুর্বলতায় ভোগেন এমন ব্যক্তির জন্য ত্বীন ফল খুবই উপকারী।
বিশেষ করে মুখ, জিভ বা ঠোঁট ফাটার সমস্যা থাকলে তা নিরাময় করতে ডুমুর সাহায্য করে।
হজমে সাহায্য করে
এতে বিদ্যমান উচ্চ ফাইবার আপনার হজমকে উন্নত করবে। এটি বিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রেহাই দেয়। ত্বীন ফল ডায়ারিয়া নিরায়মেও কাজ করে এবং সম্পূর্ণ হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
আপনার হজমকে উন্নত করতে নিয়মিত ২-৩টি ত্বীন পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করুন। এর সাথে চাইলে মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন।
রক্তস্বল্পতা দূর করে
ত্বীন ফলে আয়রনের প্রাচুর্য্য আপনার শরীরের রক্তস্বল্পতা ও আয়রনের ঘাটতি পূরন করবে। নারীদের দেহে আয়রনের পরিমান সঠিক রাখা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায়ও মায়ের দেহে আয়রনের পরিমান নিশ্চিত করতে পারে ত্বীন ফল। এতে উপস্থিত আয়রনের কার্যকারিতা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ ও দূর করতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
গবেষনায় উঠে এসেছে, যেসকল নারীরা তাদের ডায়েটের অংশ হিসেবে রোজ ত্বীন গ্রহন করেন তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কম।
মূলত ত্বীন -এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কোলন ক্যান্সার রোধেও এটি বেশ কার্যকর।
হাড়ের রক্ষণাবেক্ষণে ত্বীন ফল
হাড়ের সুস্থতায় ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানটি আমাদের দেহে উৎপাদন হয় না। তাই একমাত্র খাদ্যাভাসের মাধ্যমেই শরীরে এর চাহিদা পূরন করতে হয়। ত্বীনে মজুত ক্যালসিয়াম আপনার দেহে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরন করে হাড়কে করে তুলবে মজবুত ও শক্তিশালী।
এছাড়াও এটি পটাসিয়ামের ভাল উৎস হওয়ায় হাড়ের ক্ষয় রোধেও উপকারী।
একইসাথে ওজন কমাতে ও বাড়াতে সাহায্য করে
বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, এই অসাধারণ ফলটি শরীরের অপ্রয়োজনীয় মেদ বা চর্বি কমায়।
ত্বীন ফলের উচ্চ ফাইবার দেহের অতিরিক্ত ক্যালোরি হ্রাস করতে সক্ষম।
আবার এই ফল বেশি পরিমানে খেলে এর উন্নত পুষ্টি উপাদান ওজন বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাই স্থুল ও রোগা উভয়ের জন্যই এটি আশীর্বাদ স্বরূপ।
অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট গুণসম্পন্ন
ত্বীন ফলের রয়েছে অসাধারণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষমতা। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্রিয়া আপনার শরীরকে জীবাণু মুক্ত রাখবে এবং রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও প্লাজমার লিপোপ্রোটিন বৃদ্ধিতেও এর বেশ সুনাম রয়েছে।
গলা ব্যাথা উপসম করে
গলা ব্যাথা কমাতে সহায়তা করবে ত্বীন ফল। এটি গলা ব্যাথা কেবল উপশমই করেনা, তা প্রতিরোধেও কাজ করে। এটি ভোকাল কর্ডের জন্যও বেশ উপযোগী। টনসিলের নিরাময়েও ব্যবহার করা হয় ত্বীন ফল।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়
বরকতময় এই ফলটি নিয়মিত গ্রহনের মাধ্যমে আপনার দৃষ্টি ক্ষমতাকে উন্নত করতে পারেন। ম্যাকুলার অবক্ষয়ের কারনে বয়স্কদের দর্শন শক্তি লোপ পায়।
এতে উপস্থিত ভিটামিন এ ম্যাকুলার অবক্ষয় রোধ করে এবং দৃষ্টি ক্ষমতাকে উন্নত করে। এছাড়াও রেটিনাল ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সক্ষম এই ফল।
ত্বকের সৌন্দর্যে ত্বীন
বাড়তি বয়সের ছাপ হিসেবে মুখে ফুটে উঠে বলিরেখার মত যত সমস্যা। এক গবেষণায় জানা যায়, ত্বীন ত্বকের বলিরেখা দূর করতে বেশ কার্যকর। এটি ত্বকে গভীর থেকে কাজ করে ফলে ব্রণ ও ব্রনের দাগ দূর করতেও এর জুরি নেই। ভিটামিন সি এবং এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্রিয়া ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ত্বককে সুন্দর ও কোমল করে তুলে।
চুলের পরিচর্যায়
কেবল সুস্বাস্থ্যেই নয়, চুলের যত্নেও ত্বীন এর বিকল্প নেই। চুল পরা কমাতে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে এটি। কারন এতে আছে চুলের জন্য উপকারী ভিটামিন সি,ই ও ম্যাগনেসিয়াম।
চুলের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে এর খ্যাতি বেশ পুরোনো। এটি স্ক্যাল্পের ময়েশ্চার ধরে রাখে।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতির পূরণে
* যাদের দুধ ও দুধের তৈরি খাবারে অ্যালার্জি আছে তাঁরা ক্যালসিয়ামের ঘাটতির পূরণের জন্য নিয়মিত ত্বীন ফল খান। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম।
শুকনো ত্বীণ ফল (আঞ্জির) পুষ্টি তথ্য
আরডিএর প্রস্তাবিত দৈনিক গ্রহণযোগ্য পরিমাণ হল ½ কাটা ১ কাপশুকনো ত্বীন ফল যা প্রায় 50 গ্রাম
শক্তি – 125 ক্যালোরি
প্রোটিন – 1.6 গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট – 31.9 গ্রাম
ফ্যাট – 0.5 গ্রাম
ফাইবার – 4.9 গ্রাম
খনিজ:
81 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম = আরডিএর 8.1% (প্রায় 1000 মিলিগ্রাম)
1 মিলিগ্রাম আয়রন = আরডিএর 5% (প্রায় 20 মিলিগ্রাম)
আরডিএর 34 মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম = 9.71% (প্রায় 350 মিলিগ্রাম)
ফসফরাস 34 মিলিগ্রাম = আরডিএর 5.6% (প্রায় 600 মিলিগ্রাম)
340 মিলিগ্রাম পটাসিয়াম = আরডিএর 7.2% (প্রায় 4700 মিলিগ্রাম)
Reviews
There are no reviews yet.